প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল
একবিংশ শতাব্দীতে বহুল আলোচিত ও প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হলো সুন্দর প্রেজেন্টেশন দেওয়া। শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্রে অথবা বিজনেস যে সেক্টরের ক্ষেত্রেই হোক বর্তমান বিশ্বে ভাল প্রেজেন্টেশন দেওয়া একটি স্মার্টনেজ, সেই সেক্টরের মানুষকে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেওয়া। William Rushton বলেন -“The goal of this presentation is to impress, rather than inform.” আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী ও কর্মক্ষেত্রে এক্টিভ তা আপনার প্রেজেন্টেশনের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠে ।
বর্তমানে শিক্ষাজীবনে কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষার্থীকেই প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। নির্দিষ্ট কোন টপিক নিয়ে এই প্রেজেন্টেশনগুলো দিতে হয়। এই প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্য কিছু বেসিক নিয়ম মানতে হয় যেন প্রেজেন্টেশনটা সুন্দর, সাবলীল ও সবার কাছে বোধগম্য হয়। সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের পাশাপাশি একটি সুন্দর স্লাইড তৈরি করতে হবে ও প্রেজেন্টেশনের কন্টেন্টের হতে হবে সমৃদ্ধ । আপনার উপস্থাপনা হতে হবে আকর্ষণীয় ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হতে হবে চমৎকার। একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশন অনেকদিন পর্যন্ত অডিয়েন্সের মনে থাকে।
নিচের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনার প্রেজেনটেশন কে আরো সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে –
পূর্ব প্রস্তুতি
একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ প্রেজেন্টেশন দিতে পূর্বপ্রস্তুতির বিকল্প নেই। প্রেজেন্টেশনের পরিকল্পনা করার আগে নিজেকে মনে মনে প্রেজেন্টেশনের মূল বিষয়টা কি এবং কোন মেসেজটি দিতে চাই অডিয়েন্সকে সেই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।একজন প্রেজেন্টার অডিয়েন্সের কাছে প্রেজেন্টেশনের একটি বিস্তারিত বিষয়ের মূল মেসেজটি সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করে। তবে প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রেজেন্টারের অবশ্যই ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলে প্রেজেন্টেশনটি বেশি সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় হয়। প্রেজেন্টারকে আত্মবিশ্বাসীও মনে হয়। প্রেজেন্টেশন এর মূলবিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আগে থেকে গুছিয়ে নিয়ে সেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেজেন্ট করলে পুরো প্রেজেন্টেশনে একটি ধারা বজায় রাখতে পারবেন।
অডিয়েন্স ও আই কন্ট্যাক্ট
একটি ভালো প্রেজেন্টেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অডিয়েন্সকে বোঝা । অডিয়েন্স কি শুনতে চায় আর একজন প্রেজেন্টার হিসেবে আমি কি দিতে চাই এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় করা জরুরি। এই প্রেজেন্টেশনে অডিয়েন্সের কি প্রত্যাশা ও তারা আসলে কোন বিষয়গুলো শুনতে চায় তার ওপর ভিত্তি করে আপনার মেসেজটিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। এক্ষেত্রে আপনার প্রেজেন্টেশনে কোন শ্রেণির মানুষ আসছে তা সর্ম্পকে আপনি পূর্বে অবগত থাকলে সহজেই পূর্বপরিকল্পনা করে আপনার অডিয়েন্সকে তাদের জায়গা থেকে প্রত্যাশিত একটি প্রেজেন্টেশন উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
তবে এর পাশাপাশি প্রেজেন্টেশনের সময় অডিয়েন্সের সাথে আপনার এনগেজমেন্টও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেজেন্টেশনের সময় সবসময় অডিয়েন্সের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখা উচিত এবং সেগুলোর প্রতি সাড়া দেয়া ও আই কন্ট্যাক্ট করা। অধিকাংশ প্রেজেন্টার এই কাজটি করতে ব্যর্থ হন। আপনার প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু যতই ভালো হোক না কেন কিন্তু এর সাফল্যের পেছনে অডিয়েন্সের সাথে আই কন্ট্যাক্ট ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্ব দেয়া উচিত। হাসিখুশি থেকে এবং আই কন্ট্যাক্ট করে অডিয়েন্সের নজর আপনার দিকে ধরে রাখা প্রেজেন্টেশনে খুব সাহায্য করে। এতে করে প্রেজেন্টারের নার্ভাসনেসও কম হয়।
শুরুটা আকর্ষণীয় হওয়া চাই
আপনার প্রেজেন্টেশনের শুরুটাতেই নির্ভর করছে আপনার প্রেজেন্টেশন কতটা ভাল হবে এবং অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করবে। তাই শুরুতেই অডিয়েন্সের নজর কাড়ার ব্যাপারটি অবশ্যই আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শুরুতে “Welcome ” বা “Good Morning” না জানিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু করে প্রেজেন্টেশনকে চমৎকার করা ও অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করে নিজের দিকে নিয়ে আসলে পুরো প্রেজেন্টেশনে তা আপনার জন্য সহায়ক হবে । তাই প্রেজেন্টেশনের শুরুটা আপনি ছোট্ট মজার কোন গল্প দিয়ে শুরু করলেন বা বিখ্যাত ব্যক্তির কোন উক্তি বা quotes দিয়ে শুরু করতে পারেন অথবা নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার কোন শিক্ষণীয় বিষয় দিয়েও শুরু করতে পারেন। যদি এসবের কিছুই করতে না পারেন তবে হয়তো ছোট কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমেও প্রেজেন্টেশন শুরু করতে পারেন। ফলে আপনার প্রেজেন্টেশন অডিয়েন্সের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
১০-২০-৩০ নিয়ম
Apple এর একজন কর্মকর্তা Guy Kawasaki প্রেজেন্টেশন নিয়ে একটি নিয়মের কথা বলেন যাতে করে অডিয়েন্সকে সহজেই মুগ্ধ করা যায়। তার মতে প্রেজেন্টেশন স্লাইড শো হওয়া উচিত ১০ টা এবং প্যারাগ্রাফ আকারে অনেক কিছু উপস্থাপন না করে স্লাইডগুলোতে কিছু পয়েন্ট আকারে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা উচিত।এতে করে একদিকে যেমন অডিয়েন্সের কাছে বিষয়গুলো আকর্ষণীয় হয় তেমনি অপরদিকে প্রেজেন্টারও তার বিষয়বস্তুগুলো সহজেই উপস্থাপন করতে পারেন। তবে প্রেজেন্টেশনের ব্যাপ্তি যেন ২০ মিনিটের বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। আর স্লাইডে লেখার ফন্ট সাইজ ৩০ এর বেশি হবে না। প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে “Death by PowerPoint” বলা হয়।
বডি ল্যাঙ্গুয়েজ
প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রেজেন্টেশনের সময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্থির হয়ে রোবট এর ন্যায় না থেকে অডিয়েন্সের দিকে ডাইনে বামে নাড়াচাড়া করবেন।পকেটের ভিতরে হাত রাখবেন না বা হাত শক্ত করে রাখবেন না। কথার সাথে সাথে মুখভঙ্গি পরিবর্তন করা, প্রয়োজন অনুযায়ী হাত নড়ানো।তাই সকল বিষয়ের পাশাপাশি বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকটিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত।
উপরের বিষয়গুলোর সাথে সাথে যথাযথভাবে উচ্চারণ করতে হবে যেন প্রেজেন্টেশনের প্রত্যেকটা কথা অডিয়েন্সের কানে পৌঁছায়। অস্পষ্টতাভাবে কথা বললে অডিয়েন্স কিছুই বুঝতে পারবেন না এবং ড্রেস-আপের ব্যাপারেও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।