ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের পাঁচটি কারণ
ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ – শব্দটা আমাদের সমাজে ইদানিংকালে খুব পরিচিত একটা শব্দ। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেও ডিভোর্সের বা বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ এত বেশি ছিল না। বিবিএস জরিপ ২০১৮ অনুযায়ী বর্তমানে আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার পূর্বের চেয়ে শতকরা ৩৪% ভাগ বেড়ে গেছে। বিয়ে একটি পবিত্র সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন। কিন্তু আমাদের গতিময় সমাজের চাওয়া পাওয়া আর অতিমাত্রায় আত্মনির্ভরশীলতা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের চিন্তা ধারাকে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনের উর্ধে নিয়ে যায় – যার ফলে খুব অল্পতেই আজকাল ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় দম্পতিরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিবাহবিচ্ছেদের শুরুটা হয় খুব সামান্য কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে অথচ পরবর্তীতে তা অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। বিবাহবিচ্ছেদের সঠিক কারণ নির্ধারণ করা খুব কঠিন। কারণ প্রত্যেক দম্পতির জীবন বা প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে নিচের পাঁচটি কারণ কে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য দায়ী করা যেতে পারে –
সঠিক সঙ্গী নির্বাচনে ব্যর্থতা
সঠিক জীবন সঙ্গী নির্বাচনকে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ে করার পূর্বে অনেকে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন পরিবার এর কথা মতো। যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন অনেকে তার সাথে ভালো মতো কথা বলা, বা তার সাথে তার সম্পর্ক মানাবে কি না বা সামঞ্জস্য হবে কি না সেটা ভেবে দেখার সুযোগটাও পায়না। যার ফলে বিবাহের ফলে সংসার জীবনে শুরুতে খুব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অন্তঃকলহ গুলো বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে বিচ্ছেদে রূপ নেয়।
চাওয়া-পাওয়ার অসমতা
বিবাহবিচ্ছেদের শুরুটা হয় সাধারণত চাওয়া-পাওয়ার অসমতা থেকে। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী জীবনের শুরুতে চাওয়া পাওয়া একরকম থাকলেও, কোন এক পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় যে কোনো না কোনো কারণে দুজনের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে অনেকটা তারতম্য তৈরি হয়। এটা হতে পারে ব্যক্তিগত কারণে, পেশাগত কারণে অথবা বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তিত মন মানসিকতার কারণে। জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় যে দুজনার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে বিস্তর তারতম্য যা থেকে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং বিচ্ছেদে রূপ নেয়।
দীর্ঘ দাম্পত্য জীবন
অনেক মনস্তত্ত্ববিদ দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনকে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি সাধারণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যদিও সবসময়ই এটা ঠিক নয়। খুব অল্প বয়সে বিয়ে করার ফলে সাধারণত দাম্পত্য জীবনের পরিধি অনেক বেড়ে যায়, যার ফলে কোন এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। শুরু তে ছোট খাটো ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও তা এক সময় তা বড় আকার ধারণ করে এবং শেষ পরিণতি হয় বিবাহবিচ্ছেদ।
উচ্চাভিলাষ বা পরশ্রীকাতরতা
গতিশীল জীবনে আজকাল অনেকেই অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়ে। তাছাড়া সামাজিক পরিবর্তনের এই যুগে মানুষের মধ্যে পরশ্রীকাতরতার মাত্রা, বিলাসী জীবন যাপনের প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায় যার ফলে অনেকেই তার বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না এবং আরো বেশি উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়ে। উচ্চাভিলাষী চিন্তা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে নতুন কোনো শখ, সঙ্গী বা চিন্তার প্রতি আসক্ত করে যা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে টানা পোড়েনের সৃষ্টি করে। একদম চরম পর্যায়ে তা বিচ্ছেদে রূপ নিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ার কুপ্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে যে ইদানীংকালে সোশ্যাল মিডিয়ার সুপ্রভাবের চেয়ে কুপ্রভাবের পরিমানটাই বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি মানুষকে ঠেলে দেয় একটি কৃত্তিম জগতের দিকে এবং অনেকেই বাড়তি বিনোদনের খোঁজে নতুন নতুন বন্ধুত্বের সূচনা করে যা একসময় অবৈধ সম্পর্কে বা পরকীয়াতে পরিণত হয়।
এটা মনে রাখা উচিত যে বিয়ে শুধু দুটি মানুষের মনের বা শরীরের মিলনের নাম নয়। বিয়ের সাথে জড়িয়ে থাকে দুটি পরিবার, সন্তান যারা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিচ্ছেদের ফলে। বিয়ে মানে ত্যাগ, একে ওপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা। তাই শুধু নিজের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য না দিয়ে খেয়াল করা উচিত কিভাবে বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনকে রক্ষা করা যায়।
Edited.
Image courtesy – Pexels