বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক হতাশার ৫টি কারণ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক হতাশার ৫টি কারণ

মানসিকসমস্যা বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড়ো সমস্যা । ২০১৬ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক গবেষণা দেখা গেছে, দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আর তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষিতদের মাঝে এই মানসিক সমস্যার প্রবণতা সবথেকে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রয়োজনে পরিবার ও কাছের মানুষদের কাছ থেকে দূরে এসে এই মানসিক সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে সব থেকে বেশি। ভবিষ্যৎ উচ্চাভিলাস, প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া, হতাশা প্রভৃতি ধাপে ধাপে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে নিয়ে যায় আত্মহত্যা বা আত্মহননের মতো জঘন্যতম পরিণতিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এরকমই  ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক হতাশার কারণ –

. পছন্দসই সাবজেক্ট পড়তে না পারায় হতাশা

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে পছন্দসই সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ না পাওয়ার কারণে অনেক ছাত্র /ছাত্রী শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ তারা ভুলে যাই যে এখনকার দিনে সব বিষয়েরই কিছু না কিছু গুরুত্ব রয়েছে । তাছাড়া শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য আত্মবিকাশ, যা নির্ভর করে সম্পূর্ণ নিজের উপর। প্রখ্যাত রোমান ফিলোসোফার Marcus Tullius Cicero এর মতে ” While there’s life, there’s hope”. সুতরাং, না পাওয়ার বেদনা গুলো স্মরণ না করে, যা আছে সেই গুলোকে নিয়ে কিভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাই তার চেষ্টা করে যেতে হবে।

. উপযুক্ত ক্যরিয়ার প্লানিং করতে না থাকা

একটি বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য আছে – Failing to PLAN is planning to FAIL.আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই কোনো সুনিদৃষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এগিয়ে যাই। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরও ক্যারিয়ার নিয়ে নির্দিষ্ট কোন প্লান থাকে না। বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই ধরণের সুযোগের অভাব অনেক বেশি। অল্প কিছুসংখ্যক যারা বিভিন্নরকম এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এ জড়িত ও ক্যারিয়ার সচেতন তারা ব্যতিত সিংহভাগের কোন প্লান থাকেনা। সারা বছর এলোমেলো সময় পার করে এবং গ্রাজুয়েশনের শেষবর্ষে এসে হতাশাগ্রস্থ হয়। কোন কিছু চিন্তা ছাড়াই অন্যের দেখে নিজেও দৌড়ানো শুরু করে। লক্ষ্যহীনভাবে এগোতে এগোতে একসময় যখন কোন কিছু মেলাতে পারে না তখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব থেকে বের হয়ে আসার সবচে ভালো উপায় হলো এমন পরিবেশে উঠা বসা করা যা মানুষিক বিকাশ ঘটে এবং সর্বোপরি একজন ক্যারিয়ার মেন্টর বা গাইডের যে সঠিক দিক নির্দশনা দিতে পারবে।

. মাদকাসক্তি অসৎ সঙ্গের প্রভাব 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিসরে সব ধরনের পরিবেশ গড়ে উঠে। এখানে ক্যারিয়ার নিয়ে যেমন কাজ করে শিক্ষার্থীরা তেমনি দুর্নীতিগ্রস্থও হয়ে উঠে অনেকে। বাড়ির বাইরে এসে অচেনা পরিবেশে অনেকেই পেয়ে যায় অসৎ সঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই।  কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই হয়ে যায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কেউবা মাদকাসক্ত, কেউ চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে যাবতীয় অপকর্মে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে ক্যাম্পাসে চলাফেরায় থাকে ভীত, মেয়েরা অজানা বিপদের আশঙ্কায় থাকে সব সময়। এসব থেকে পরিত্রানের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সুন্দর ও সৃষ্টিশীল কিছু কাজে জড়িত থাকা।  আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ধরণের ক্লাব, গোষ্ঠী, ফোরাম দেখা যাই যা অনেক দিক থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বিকাশ ঘটায়।  এই ধরণের সমাজে উঠা বসা করলে স্বাভাবিক ভাবেই মন মানুষিকতার বিকাশ ঘটে।  মন রাখতে হবে – You are only the average of the group of people that you mix with.

. অর্থনৈতিক সমস্যা 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই আসে নিম্নবিত্ত বা গরীব পরিবার থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে পরিবার থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলেও তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় বাস্তব জীবনের কঠিন অধ্যায়। একদিকে থাকে মনের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন ও সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি আর অপর দিকে অস্বচ্ছল পরিবারে বাবা-মার মলিন মুখখানা ও পারিবারিক নানা জটিলতা। অনেকে টিউশনি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাতে জড়িত হতে শুরু করে। স্বপ্ন ও বাস্তবতার সংঘাত চলতে থাকে মনের অগোচরে।  একসময় হাঁপিয়ে উঠে মন এবং কোনমতে পড়ার পাট চুকিয়ে পরিবারের হাল ধরার প্রয়াস করে।  কোটি কোটি স্বপ্ন চাপা পড়ে বাস্তবতার বেড়াজালে এবং মানসিক অসুস্থতা ভুগতে থাকে কোমলমতি প্রাণ। এধরণের অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সব থেকে ভালো উপায় হলো পড়ার পাশাপাশি, অল্প কিছু উপার্জনের ব্যবস্থা করা। প্রাইভেট টিউশন অথবা কোচিং সেন্টার এ পড়ানো হলো সব থেকে সহজ উপায়।  তবে তাছাড়াও আজকাল আরো অনেক উপায় রয়েছে।  ফ্রিল্যান্স হিসেবে অনেক ধরণের কাজ করার সুযোগ রয়েছে তাদের জন্য যারা নিজের বিশেষ কোনো দক্ষতা দেখতে পারে, যেমন – রাইটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি।

. ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তি 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে নতুন নতুন  মানুষের মধ্যে অজ্ঞাভাবে কাউকে ভালো লেগে যায় অনেকের।  সময়ের সাথে সাথে ভাললাগা প্রণয়ে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা সুখকর হয় না।  অনেকে একতরফা প্রণয় নেতিবাচক হয়। তার থেকে বর্তমানে সবথেকে বড় সমস্যা হলো প্রতারণা।  অনেকে শুধুমাত্র সময়ের প্রয়োজনে ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের তাগিদে অপর মানুষটির সাথে প্রতারণা করতে থাকে এবং তার দুঃসময়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।  এই প্রতারণা নিতে না পারা অনেক মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে উঠে,  অনেকে নিজের জীবনকে মূল্যহীন মনে করা শুরু করে এবং কেউ কেউ বেঁচে থাকার থেকে আত্মাহত্যাকে সহজ মনে করে নিজের জীবনকে বিসর্জন দেয়।  আর এই ভুক্তভোগীর সিংহভাগই নারীরা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ আত্মহত্যার প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, আর এর একটা বড়ো অংশই দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। এই ধরণের পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকার উপায় হলো – কিছুটা উচ্চাভিলাষী হওয়া এবং অনেক বড়ো লক্ষ নির্ধারণ করা যা অন্য সব কিছুর চেয়ে প্রাধান্য পায়।

 

Sumyia Mira

Sumyia Akter Mira is an editorial assistant at Starmums and as well as she works on several social activities to create positive cognition among the people. She's currently studying Geography and Environmental Studies Department, University of Rajshahi. Passionately loves leadership practice, reading books and travelling during leisure time. সুমাইয়া আক্তার মিরা স্টারমামস্ এর একজন এডিটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সেই সাথে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে বেশ কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডে কাজ করেন । তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়ন করছেন । অবসরে নেতৃত্ব চর্চা, বই পড়া আর ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন।

Leave a Reply