স্বপ্নকে সফলতায় বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র

স্বপ্নকে সফলতায় বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র

স্বপ্নতো সবারই থাকে, কিন্তু সফল সবাই হতে পারে না। সফল ও ব্যর্থ এ দুইয়ের মাঝে ব্যবধান খুব সামান্যই হয়। কেউ স্বপ্নকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলে আর কেউ কোন নিয়ম না জেনেই শুধু স্বপ্নের পেছনে ছুটতে থাকে। স্বপ্নকে সফল করতে হলে কিছু কাজ অত্যাবশ্যকীয় যেগুলো না করলেই নয়। তাই স্বপ্নকে সফলতায় পরিণত করতে ৫টি অত্যাবশ্যকীয় টিপস-

১. সুষ্ঠূ পরিকল্পনা
কোন কাজ শুরু করার আগে সেটা নিয়ে একটি পূর্ব পরিকল্পনা করা অতীব জরুরি। কারণ পূর্ব পরিকল্পনা করলে পর্যায়ক্রমে কাজের একটি সমন্বয় থাকে এবং স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা সহজ হয়ে যায়। Brian Tracy এর মতে “Every minute you spend in planning saves 10 minutes in execution; this gives you a 1,000 percent return on energy!” পূর্ব পরিকল্পনা আপনার সময়কে যেমন বাঁচাবে, তেমনি আপনার কাজকে করবে সহজসাধ্য। আর কাজ করার সময় যখন আপনার পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে জানা থাকবে তখন আপনি সহজেই কাজে অগ্রগতি লাভ করবেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিমার্ণ হোক বা কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক বা রাষ্ট্র পরিচালনা করাই হোক না কেন সবার আগে সেটি নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরিকল্পনা করে তবে কাজ শুরু করা হয়ে থাকে। স্থাপনা নির্মাণে যেমন প্রকৌশলীর কাছ থেকে পরিকল্পনা নিয়ে বাজেট করা হয় তেমনি একটি সুন্দর ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা করুন আপনার নিজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের সাপেক্ষে যেন নিজেকে করতে পারেন সমৃদ্ধ ও আপনার স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন।

২. নিয়মিত বইপড়া
“Reading is a basic tool in the living of a good life.” – Mortimer J. Adler. বইপড়া সদগুন গুলোর মধ্যে একটি। বইপড়ার অভ্যাস আপনাকে করতে পারে উজ্জীবিত, জীবনকে করতে পারে পূর্ণ। জীবনে সফল ব্যক্তি যারা তাদের জীবনী যদি আমরা দেখি তবে তাদের বই পড়ার অভ্যাসটি নজর কাড়ে সবার আগে।Warren Buffett, Bill Gates, Jeff Bezos, Mark Cuban, Elon Musk, Mark Zuckerberg নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং জীবনে সফল হয়েছেন। Warren Buffett তাঁর পেশা জীবনের শুরুতে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ পৃষ্ঠা নিয়মিত পড়তেন, Bill Gates প্রতিবছর ৫০ টি বই শেষ করেন, Elon Mask রকেট সায়েন্স এর বিদ্যা বই পড়ার মাধ্যমেই অর্জন করেছেন। Mark Cuban প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি বই পড়েন। বিশ্বর সেরা সফল ব্যক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার পরও তারা নিয়মিত বই পড়েন কারণ একটাই জানার কোন শেষ নেই।

৩. মেন্টর বা পথ প্রদর্শক 
বর্তমান প্রতিযোগিতার এই সময়ে আপনার স্বপ্নের পথে আদৌও কি সঠিক পন্থা অবলম্বন করছেন নাকি নেতিবাচক দিকে প্রভাবিত হয়ে পড়ছেন – এ নিয়েই শঙ্কা। কারণ প্রতিযোগিতা এখন এতটাই তুঙ্গে উঠেছে আর সফলতা ও ব্যর্থতার মাঝে এত সুক্ষ্ম পার্থক্য যে বোঝাই মুশকিল আপনার গতিবিধি আসলে কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে। নিজের গতিবিধি বেশিরভাগ সময় নিজে বোঝা যায় না, তাই এমন একজন মানুষের প্রয়োজন যে আপনার সম্পর্কে অনেক ভালো জানে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবেন। Shawn Hitchcock বলেছিলেন “A mentor empowers a person to see a possible future, and believe it can be obtained.” অর্থাৎ আপনার এমন একজনকে মেন্টর হিসেবে নির্বাচন করুন যে আপনার সক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাসী এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটু হলেও সচেতন।

৪.পরিশ্রম ও কঠোর অধ্যাবসায় 
স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর যত মহান পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তার পেছনে সব থেকে বড় ভূমিকা রয়েছে কিছু মানুষকে অক্লান্ত পরিশ্রমের। শুধু মহান পরিবর্তন নয়, ছোট্ট কাজ থেকে শুরু করে এভারেস্ট জয়, চাঁদে মানুষের অবতরণ সব কিছুর পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। মানুষ আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে, আপনার ভাগ্যও খারাপ হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি কঠোর পরিশ্রমী হোন তবে পরিশ্রম কখনও আপনাকে হতাশ করবে না। Shreesh Panday বলেছিলেন “Hard work never betrays”। ইতিহাসে আমরা তারই নজির পাই।‘স্কটদের রাজা’ রবার্ট ব্রুস ক্ষুদ্র মাকড়সাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বার বার ব্যর্থ হওয়ার পর ৮ম বারের প্রচেষ্টায় তার রাজ্য পুনরুদ্ধারে সফল হয়।

৫.নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকা
মানুষ তার নিজের চিন্তা-ভাবনা দ্বারা সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয় সেটা ইতিবাচকই হোক আর নেতিবাচকই হোক। “যারা বলে অসম্ভব, অসম্ভব তাদের দুয়ারেই বেশি হানা দেয়” —জন সার্কল। আমি বোধ হয় আর পারব না, আমাকে দিয়ে হবে না, আমিই কেন – এই চিন্তাগুলো আপনাকে কখনই সামনের দিকে এগোতে দেবে না। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র -প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই সূত্রের ভাবাদর্শ অনুযায়ী আাপনার নেতিবাচক চিন্তাগুলো আপনার মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। Norman Vincent Peale মতেও “Negative thinking definitely attracts negative results” বিশ্বসেরা মিলনিয়ার, বিলিনিয়ার জেফ বেজোস, বিল গেটস , ওয়ারেন বুফে , মার্ক জুকারবার্গ তারা নিজেদের জীবনে যে বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়নি তা কিন্তু নয়। কিন্তু নেতিবাচক চিন্তাকে তারা কখনোই প্রশ্রয় দেননি। সব পরিস্থিতিতে নিজেকে ইতিবাচক রেখে কাজ করে গেছে বলেই আজ তারা বিশ্বের বুকে সফলতার শীর্ষস্থানে নিজেদের নামকে নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।

“Your life is your dream dreamt by your heart.” Debasish Mridha এই উক্তিটি সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। আপনার স্বপ্ন পূরণে আপনার নিজেকেই কাজ করতে হবে। তাই কাজ করার পাশাপাশি সব বিষয়ে খেয়াল রাখুন যা,আপনাকে সফলতার পথে এগিশে নিয়ে যাবে। তবে সফলতার কোন শেষ নেই, নেই কোন ধরাবাঁধা নিয়ম। সফলতা আপেক্ষিক বিষয় যা মুহূর্তে-মুহূর্তে পরিবর্তন হতে পারে। আপনি ক্ষেত্র বিশেষে নিজেকে সফল ভাবতে পারেন, তবে থেমে গিয়ে সফলতাকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই জীবনকে করুন প্রাণবন্ত, স্বপ্নকে করুন বিস্তৃত, জীবন হোক গতিময়।

Sumyia Mira

Sumyia Akter Mira is an editorial assistant at Starmums and as well as she works on several social activities to create positive cognition among the people. She's currently studying Geography and Environmental Studies Department, University of Rajshahi. Passionately loves leadership practice, reading books and travelling during leisure time. সুমাইয়া আক্তার মিরা স্টারমামস্ এর একজন এডিটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং সেই সাথে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে বেশ কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডে কাজ করেন । তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়ন করছেন । অবসরে নেতৃত্ব চর্চা, বই পড়া আর ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন।

Leave a Reply