একটি ভয়াবহ স্মৃতি আর অনেক গুলো স্বপ্নের অপমৃত্যু!

একটি ভয়াবহ স্মৃতি আর অনেক গুলো স্বপ্নের অপমৃত্যু!

মাত্র ২৫ বছরের একটা উচ্ছল প্রাণবন্ত মেয়ে – চোখে অপার স্বপ্ন, অদম্য মনোবল একটা সুন্দর ভবিষৎ গড়ার। সব কিছু ঠিকই ছিল তানজিলা মৌলি মিথির জীবনে । Asian University of Bangladesh থেকে BBA শেষ করেই নানা রকম কাজের সাথে সম্পৃক্ততা – Bangladesh Youth Leadership Center, GrameenPhone, ACI এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং সর্বশেষ হেরিটেজ ট্যুরিজম এ একটা ব্যস্ত কর্মজীবনের শুরু।

সব কিছুই যেন খুব পরিপূর্ণ ছিল মিথির জীবনে। মাত্র ১ বছরের কিছু সময়ের বিবাহিত জীবন। সঙ্গীটাও ছিল মনের মতো। US Bangla Airlines এ কর্মরত মোঃ রায়হানুল ইসলামের সাথে ঢাকার কাফরুলে নিজের একটা ছোট্ট স্বপ্নের সর্গ ছিল মিথির।

মিথির শৈশব কাটে বগুড়ায়। বাবা অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদের একমাত্র আদরের দুলালী মিথির জীবনটা হতে পারতো একটা বর্ণিল, স্বপ্নময় আর মায়ায় ঘেরা গল্পের।

মা বাবার আদরের দুলালী মিথির দেহটা পর্যন্ত চিনতে কষ্ট পেতে হলো তার কাছের মানুষ গুলোর।

কিন্তু ২৮ মার্চের ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিলো মিথির সব স্বপ্ন গুলো। ঠিক ২৫ মার্চের কালো রাতের ভয়াবহতার মতোই, যখন হিঙ্গস্র পাক বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের নিরীহ বাঙালির ওপর। কেড়ে নেয় অজস্র প্রাণ।

বাঁচার অনেক আকুতি করেছিল মিথি। এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর পরই, ১০ম তলার হেরিটেজ ট্যুরিজমের অফিস থেকে বের হবার সুযোগ না পেয়ে একে একে স্বামী, বাবা সহ কাছের মানুষ গুলো কে বার বার কল করে জীবন বাঁচানোর আকুতি করেছিল মিথি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। নির্মম ভাবে কেড়ে নিলো তার প্রাণ, আরো অনেকের সাথে। মা বাবার আদরের দুলালী মিথির দেহটা পর্যন্ত চিনতে কষ্ট পেতে হলো তার কাছের মানুষ গুলোর। শেষ পর্যন্ত তার ঘড়ি, আংটি দেখে তাকে সনাক্ত করতে হলো।

এতো গেলো শুধু একটা স্বপ্নের গল্প। মিথির মতোই আরো অনেক গুলো স্বপ্নের সমাধি হলো ২৮ মার্চের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। কার দোষে এমনটা হলো? কে দায়িত্ব নিবে এই মর্মান্তিক ঘটনার এবং স্বজন হারানো এই পরিবার গুলার আহাজারির? জীবন থেমে থাকে না – তাকে চলতে হয় আপন গতিতে। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনা গুলো আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেয় যে – একজন অসৎ ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা, একজন অসাবধানী ব্যক্তির ভুল, একজন শাসকের ব্যর্থতা – ডেকে আনে সর্বনাশ অনেক মানুষের জীবনে। এমন সর্বনাশ, যা তিল তিল করে নিঃশেষ করে দেয় অনেক গুলো মানুষ, পরিবার আর স্বপ্নকে, মিথির মতো সম্ভাবনাময় প্রাণ গুলো কে।

আমাদের দোয়া আর সমবেদনা রইলো শোক গ্রস্ত পরিবার গুলার জন্য। আমাদের আকুল আবেদন রইলো সবার কাছে তার নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার যাতে এমন করুন গল্প আর না লিখতে হয় আমাদের…..

Image courtesy – https://www.bd-journal.com

Sayem Hossain

An avid idea tinkerer, grotesquely positive and life-long learner – Dr Sayem Hossain is an academic, researcher and thought leader based in Australia. Sayem's work has published in globally reputed magazines and academic journals. Currently Sayem serves as a Strategy lead for Australian government in health sector. Sayem also holds an award for ‘best dad’ given by princess Tanaaz.

Leave a Reply