ইউটিউব কি আমাদের বাচ্চাদের সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে?

ইউটিউব কি আমাদের বাচ্চাদের সঠিক শিক্ষা দিচ্ছে?

ছোট্ট একটা বাচ্চা আর তার মাI সারা দিন ধরে তাদের দুজনের কাজ শুধু বিভিন্ন ধরণের খেলনা নিয়ে খেলা করাI নিত্য নতুন, অদ্ভুত রকমের সব খেলনাI যা দেখলেই বাচ্চাগুলো হা করে বসে বসে গিলে আর মাথা খারাপ হয়ে যায় – কান্নাকাটি, আবদার শুরু হয় বাবা মার্ কাছে, আমারও  চাই ঐসব খেলনা গুলো!

এই হলো রায়ান এর গল্পI রায়ান টয়জ রিভিউ হলো ইউটিউবএর সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেল গুলোর একটাI বাবা মা সবাই মিলে শুধু মাত্র খেলা ধুলা আর বাঁদরামি মার্কা ভিডিও দিয়ে বছরে ২২ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে এই পরিবার শুধু ইউটিউব এর বদৌলতেI তবে আর সব ইউটিউব চ্যানেলের মতোই, রায়ানের শুরুটা ছিল খুবই সাধারণI রায়ান এর স্কুল টিচার মা তাকে ব্যস্ত রাখার জন্য বিভিন্ন খেলনা দিয়ে বসিয়ে রাখতোI একদিন শখ করে নিজেই রায়ান এর সাথে খেলতে বসে  নিজেদের এই মুহূর্ত গুলো ভিডিও আকারে ধারণ করে রাখে রায়ানের মাI তারপর সেটা কে ইউটিউবে শখ করে আপলোড করে একটা চ্যানেল খুলে বসলোI ব্যাস এভাবেই শুরু – প্রথম প্রথম ভিডিও গুলা সেই রকম কেউ দেখতোই নাI কিন্তু আস্তে আস্তে ভিডিও গুলা জনপ্রিয়তা পেতে থাকেI বর্তমানে রায়ানের ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এর সংখ্যা ১৯ মিলিয়নের বেশিI তাদের ভিডিও গুলা দেখা হয়েছে কয়েক ২৬ বিলিয়নেরও বেশি বার I মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে এতো কিছুI

রায়ান টয়জ রিভিউ চ্যানেল দেখে আজকাল আরো অনেক টয় রিভিউ চ্যানেল হয়েছে ইউটিউব এI শুধু খেলনার রিভিউ দিয়ে চ্যানেলগুলা আর সীমাবদ্ধ নেইI বিভিন্ন খেলনার কোম্পানির সাথে পার্টনারশীপ থেকে শুরু করে আরও অনেক রকমের ব্যবসায়িক মডেল তৈরী হচ্ছে ইউটিউব থেকেI রায়ান টয় রিভিউ আজকে পৃথিবীর একটা বড় টয় ফ্রাঞ্চাইজিI রায়ান ব্র্যান্ড এর টয় এখন ওয়ালমার্ট সহ বড় বড় রিটেল স্টোর গুলো তে পাওয়া যায়I

আমার লেখার উদ্দেশ্যটা অবশ্য একটু ভিন্ন – রায়ান এর মতো আরো অনেক টয় রিভিউ চ্যানেল দেখা যায় আজ কালI আমাদের বাচ্চাগুলো মোটামুটি চুম্বকের মতো এই চ্যানেল গুলার সাথে লেগে থাকেI কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ভিডিও গুলো থেকে আমাদের বাচ্চারা কি শিখছে? হয়তো তাদের জ্ঞানের পরিধি কিছুটা হলেও বাড়ছেI ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা উপকার হচ্ছেI কিন্তু আমার মনে হয় উপকারের চেয়ে অপকারের পরিমানটা অনেক বেশিI স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চাদের মধ্যে এক রকম পরশ্রীকাতরতার জন্ম নিচ্ছেI অনেক ছোট থেকেই তাদের মধ্যে পার্থিবতা আর বিলাসিতার  প্রতি একটা আসক্তি তৈরী হচ্ছেI আমার ৪ বছরের মেয়েটা রায়ান টয় রিভিউ দেখতে দেখতে প্রায়ই হাস্যকর ভাবে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলে – ” Daddy, I wish I had those toys”!

আমার নিজের টিভি দেখা মোটামুটি মাথায় উঠেছেI সারাদিন মেয়েটার কন্ট্রোল এ থাকে রিমোটটাI আর আমি কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে খেয়াল করি যে সে কি দেখছেI আমার দৃষ্টিতে বেশ কয়টা চ্যানেল আছে যা থেকে বাচ্চারা কিছুটা হলেও শিক্ষামূলক কিছু পেতে পারে –

Peppa pig – আমার কাছে Peppa pig চ্যানেলটা অন্য সব কার্টুন এর থেকে আলাদা মনে হয়I এটার মধ্যে ফ্যামিলি ভ্যালুজটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়I কিভাবে বন্ধুদের সাথে ব্যবহার করতে হয়, শেয়ার করতে হয় এবং আরো অনেক শিক্ষামূলক বিষয় গুলোকে মজা করে দেখানো হয় কার্টুনটাতেI

Blippi – পাগলাটে ধরণের এই ছেলেটার চ্যানেলটা অনেক জনপ্রিয়I সে বাচ্চাদের নানা ধরণের জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যেমন – যানবাহন, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, এবং আরো এমন অনেক কিছু যেগুলো হয়তো বাচ্চাদের শিখতে অনেক সময় লাগতোI Garbage Truck, Excavator কি  তা আমার মেয়েটা ৩ বছর বয়স থেকেই চিনে ফেলেছে Blippi-র বদৌলতেI

Wow English TV– তাড়াতড়ি ইংলিশ শিক্ষার জন্য এই চ্যানেলটা ভালোI আধা পাগল গোছের  একটা স্কুল টিচার, তার পুতুল কাকটাকে নিয়ে মজার মজার সব ভিডিও তৈরী করে, যা বাচ্চাদের সহজেই ইংলিশ শিখতে সাহায্য করেI

Little Baby Bum – এই চ্যানেলটা গানের আকারে অনেক সুন্দর আর শিক্ষামূলক ভিডিও দেখায়I

এই ধরণের আরো অনেক চ্যানেল আছে যা বাচ্চাদের ভালো কিছু শিক্ষা দেয়I

প্রযুক্তির উৎকর্ষে আজ সব বাবা  মা- ই তাদের বাচ্চার হাতে একটা করে ডিভাইস দিয়ে দেয়ার সামর্থ রাখেI কিন্তু আমাদের দায়িত্ব সেখানেই শেষ না বরং শুরু – বাচ্চারা কি দেখছে, কতটা সময় ব্যয় করছে, কার সাথে বন্ধুত্ব করছে ইত্যাদি নিয়মিত খোঁজ নেয়া আমাদের দায়িত্বI আমি শুধু ভাবি আমাদের সময়টা কত ভালো ছিলI সপ্তাহে একদিন Thunder Cats আর Captain Planet দেখলেই আমাদের মনটা খুশিতে ভরে যেতI

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…..!

Image Courtesy – SCMP

Sayem Hossain

An avid idea tinkerer, grotesquely positive and life-long learner – Dr Sayem Hossain is an academic, researcher and thought leader based in Australia. Sayem's work has published in globally reputed magazines and academic journals. Currently Sayem serves as a Strategy lead for Australian government in health sector. Sayem also holds an award for ‘best dad’ given by princess Tanaaz.

Leave a Reply